হযরত আদম(আঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত আদম(আঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা একদা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, আমি পৃথিবীতে ‘খলীফা’ অর্থাৎ প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই! এ বিষয়ে তোমাদের মন্তব্য কি? ফেরেশতাগণ বলল, হে আমাদের রব, হে আল্লাহ! আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে আবাদ করতে চান, যারা গিয়ে সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? যেমনটা করেছে জীন জাতি! কিন্তু আমরাতো সর্বদা আপনার হুকুম পালন এবং আপনার ইবাদত ও পবিত্রতা এবং গুনগান করছি। তখন ফেরেশতাদের কথা শোনার পর, আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না (সুরাঃ বাক্বারাহ আয়াত ২/৩০)। অর্থাৎ আল্লাহ চান এ পৃথিবীতে এমন একটা সৃষ্টির পাঠাতে , যারা হবে অনেক জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন এবং নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি সহকারে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী আল্লাহর বিধান সমূহের আনুগত্য করবে ও তাঁর ইবাদত করবে।

হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি

ফেরেশতাগণ এর সাথে কথোপকথন এর পরে আল্লাহ্‌ নিজ হাতে মাটি দিয়ে হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করলেন এবং এর ভিতরে রুহু দান করলেন। সৃষ্টি করা হল পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম(আঃ) কে।

মহান আল্লাহ্‌ কিছু কাদামাটি নেয়ার জন্য হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে যমীনে প্রেরণ করেন । তিনি এসে মাটি নিতে চাইলে যমীন বলল, তুমি আমার অঙ্গ হানি করবে বা আমাতে খুত সৃষ্টি করবে ; এ ব্যাপারে তোমার নিকট থেকে আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই । তখন জীব্রাঈল (আঃ) মাটি না নিয়ে ফিরে গিয়ে বললেন, হে আমার আল্লাহ্‌ যমীন তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করায় আমি তাকে নিয়ে আস্তে পারি নাই।

এবার আল্লাহ-তায়ালা হযরত মীকাঈল (আঃ) কে যমীনে পাঠালেন । যমীন তার নিকট থেকেও পুর্বের মত আশ্রয় প্রার্থনা করেন । তাই তিনিও ফিরে গিয়ে জিব্রাঈল (আঃ) এর মতই আল্লাহর কাছে বললেন । এবার আল্লাহ আযরাঈল (আঃ) কে প্রেরণ করেন । যমীন তার কাছ থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, আর আমিও আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন না করে শূন্য হাতে ফিরে যেতে পারব না, আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এরপর তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে আল্লাহর নিকট নিয়ে যান। সেই মাটি থেকেই আল্লাহ্‌ তার কুদরতি হাত দিয়ে হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করলেন।

এরপর মহান আল্লাহপাক ফেরেশতাদের আদেশ করলেন হযরত আদম (আঃ) কে সেজদা করতে। সব ফেরেশতা সেজদায় লুটিয়ে পড়ল, কিন্তু শয়তান সেজদা করল না। তখন আল্লাহতালা রেগে গিয়ে শয়তানকে বিতারিত ঘোষনা করলেন। সেই থেকে শয়তান ও প্রতিজ্ঞা করল যে, যেই আদম (আঃ) এর জন্য শয়তান হতে হয়েছে, আমি সেই আদম ও তার সন্তানদের কে পথভ্রষ্ট করব এবং জাহান্নামে প্রেরন করাব।

আদম (আঃ) এর বেহেশতে বসবাস

বেহেশতের প্রথম মানব, আল্লাহর আদেশে জান্নাতে থাকা শুরু করলেন হজরত আদম( আঃ)। মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম(আঃ)। জান্নাতের বাগানে একা একা ঘুরে বেড়ান হজরত আদম( আঃ)। কখনো বহমান নদীর তীরে। কখনো ফুলের বাগানে, কখনো ঝরনার শ্রোত। কখনো পাখির কলরবে। ঘুরে বেড়ান আর বিমোহিত হন তিনি। প্রভুর সৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হন আর শোকরিয়া জানান আল্লাহর দরবারে। কিন্তু এতকিছুর পর তার কিছু ভাল লাগে না, একা একা অনুভব করেন। তখন মহান আল্লাহ্‌ হজরত আদমের পাজরের হাঁড় খুলে নিলেন এবং সেই হাঁড় দিয়ে সৃষ্টি করলেন হজরত হাওয়াকে। প্রথম নারী, মানব জাতির প্রথম মা হজরত হাওয়া আলাইহা সালাম।

এরপর আরোশেই তাদের দুজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। আল্লাহ হজরত আদম ও বিবি হওয়াকে জান্নাতে বসবাস করার অনুমতি দিলেন এবং বললেন, ‘হে আদম! তোমার জীবনসঙ্গীনী হাওয়াকে নিয়ে জান্নাতে বসবাস করো এবং উপভোগ করো সেখানকার সব নাজ-নেয়ামত। কিন্তু সাবধান! একটি কাজ করবে না কখনো। ঐ যে গাছটি দেখছো, গন্ধম গাছ। ঐ গাছটির কাছেও যাবে না কখনো। সাবধান! ভুলেও কখনো ঐ গাছের ফল খাবে না তোমরা।যদি ঐ গাছের ফল খাও, জান্নাত থেকে বের করে দেবো তোমাদের। চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হবে সুখের এই উদ্যান থেকে।

কিন্তু তারা এই কথা ভুলে গিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় পরে সেই গাছের কাছে যায় এবং ঐ গাছের ফল খায় আদম(আঃ) এবং হাওয়া(আঃ)। তখন আল্লাহ্‌ তাদের দুজনের উপর অখুশি হলেন এবং বললেন তোমারা আমার কথা অমান্য করেছে। তাই তোমাদের জান্নাতে আর জায়গা নেই। আজ হতে তোমরা এবং তোমাদের সন্তানেরা ওই পৃথিবীতে বসবাস করবে।

আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরন

পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন তাঁদের। পৃথিবীতে এলেন হজরত আদম। এলেন হজরত হাওয়াও। পৃথিবীতে নামার পর একে অপরকে খুঁজে পেলেন না আদম-হাওয়া। হজরত আদম দেখলেন প্রিয়তমা স্ত্রী নেই তাঁর পাশে। হজরত হাওয়া দেখলেন প্রিয়তম স্বামী নেই তাঁর পাশে। বিষন্ন হয়ে গেলো আদম ও হাওয়ার মন। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসালেন হজরত আদম। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসালেন হজরত হাওয়া। প্রভুর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন দুজনেই। ফিরে চাইলেন একে অপরকে। প্রার্থনা করলেন প্রভুর কাছে। দোয়ায় দোয়ায় কেটে গেলো অনেক দিন। প্রার্থনা প্রার্থনায় বিদায় নিলো অনেক রাত। তবু থামলেন না আদম। থামলেন না হাওয়া। অনেক কিছু বলে বলে ক্ষমা চাইলেন। অনেক কিছুর ওয়াদা করলেন কিন্তু কোনো কাজ হলো না।

একদিন আদম(আঃ) এর মনে পরলো আল্লাহ্‌ তার বন্ধুর নামে দোয়া পড়ার কথা, যা তার বিয়ের দেনমোহর হিসেবে আল্লাহ্‌ পড়তে বলেছিলেন। তখন তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর নামে দরূদ পাঠ করলেন। আল্লাহ্‌ তার এই দোয়া কবুল করলেন, এবং হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে পাঠালেন আর বললেন যে আদম কে বল আমি তাকে ক্ষমা করেছি আমার বন্ধুর নামে দরূদ পাঠের কারনে। এখন যেন সে মক্কায় গিয়ে হজ্জ পালন করেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) গিয়ে আদম(আঃ) কে জানালেন, শুনে তিনি খুশি হয়ে সিজদায় লুটিয়ে পরলেন। রওনা করলেন মক্কার উদ্দেশ্যে।

আসমান থেকে বর্তমান শ্রীলঙ্কার সরন্দীপে নামানো হয়েছিলো হজরত আদম(আঃ) কে এবং বিবি হাওয়াকে নামানো হয়েছিলো জেদ্দায়। আদম(আঃ) মক্কায় গিয়ে দেখলেন হাজার হাজার ফেরেস্তা আল্লাহ্‌র ঘর তাওয়াফ করছে। তিনিও তাওয়াফ করলেন। এরপর তিনি তার স্ত্রীর জন্য দোয়া করলেন আল্লাহ্‌র কাছে। আল্লাহ্‌ তার দোয়া কবুল করলেন এবং বিবি হাওয়ার সঙ্গে মিলিত করলেন আরাফাতের ময়দানে। এরপর দুজনে একসাথে দুনিয়াতে সংসার শুরু করেন।

হযরত আদম (আঃ) এর মৃত্যু

হযরত আদম (আঃ) ১হাজার বছর বেচে ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেন শুক্রবার হল সবথেকে উত্তম দিন। কারন এই দিনে হযরত আদম (আঃ) এর জন্ম ও এই দিনে তার মৃত্যু হয়। আবার এইদিনে পৃথিবী সৃষ্টি এবং কিয়ামত ও হবে এইদিনে। হযরত আদম (আঃ) এর মৃত্যুর ১ বছর পরেই হাওয়া(আঃ) এর মৃত্যু হয়।

Share:

2 thoughts on “হযরত আদম(আঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *