আমাদের সবারই একটাই কমন প্রশ্ন হল আমরা অনেক দোয়া করি কিন্তু দোয়া কবুল হয় না। যদিও এটা নিশ্চিত হয়ে বলা কঠিন যে এই কাজ করলে দোয়া কবুল হবে। তারপর কিছু উপায় কুরআন ও হাদিসের আলোকে পাওয়া যায়। তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।
দোয়া কবুলের একমাত্র মালিক সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তায়ালা। তবে কিছু শর্ত মেনে যদি দোয়া করা যায়, তাহলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আল্লাহ্ সরাসরি চাওয়া কে বেশি পছন্দ করেন।
আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস
দোয়া কবুলে সর্বপ্রথম শর্ত হল অন্তর থেকে আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস করা। একদিকে যেমন আল্লাহ্র ভয় থাকতে হবে তেমনি তাঁর উপর আস্থাও থাকতে হবে। ধরুন আপনি মনে মনে ভাবছেন যে, আমার দোয়া কবুল করবে না আমার রব। এই বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করলে কবুল না হবার সম্ভাবনাই বেশি। আপনাকে মনে প্রানে অগাদ বিশ্বাস রাখতে হবে। আমার দোয়া কবুল করবেন আল্লাহ্ এরকম মনোবল থাকতে হবে।
দরূদ পাঠ
আমরা সকলেই জানি যে, আল্লাহ্র সবথেকে প্রিয় বন্ধু ও রাসুল হল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ(সঃ)। কেও যদি রাসুল(সঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ্ অনেক খুশি হন। বলা হয়ে থাকে যে, যদি কেও দোয়া করল কিন্তু দরূদ পরল না, সেই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যে জুলন্ত অবস্থায় থেকে যায়। হযরত আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) কে যখন বেহেস্ত হতে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিলো তাদের ভুলের জন্য। তখন তারা অনেক দোয়া করেও ক্ষমা পাচ্ছিলো না। হঠাত একদিন আদম(আঃ) এর মনে হল যে, আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় বন্ধুর নামে দরূদ শিখিয়েছিলেন। তখন আদম(আঃ) রাসুল(সঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করে দোয়া করলেন এবং ক্ষমা চাইলেন। ফলে আল্লাহ্ খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। জিব্রাইল(আঃ) এসে আদম(আঃ) কে জানালেন যে, আপনি রাসুল(সঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করেছেন, এতে আল্লাহ্ খুশি হয়ে আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
পবিত্রতা অর্জন
দোয়া কবুলের শর্তগুলার মধ্যে আরেকটি হল পবত্রতা অর্জন করা। আমাদের শরীল ও পোশাক অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। আমারা সবাই জানি পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। তাই যখন আমরা আল্লার কাছে কোন দোয়া করব, খেয়াল রাখতে হবে যেনো আমাদের শরীল ও পোশাক পবিত্র থাকে।
হালাল খাদ্য ও উপার্জন
মহান আল্লাহ্ আল্কুরানে বলেছেন, তোমরা উত্তম খাবার ভক্ষণ করো এবং নেক আমল করো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)। এখানে স্পস্ট বলা হয়েছে আমলের পুর্বে হালাল খাবার খেতে। দোয়া কবুলের আশা করলে অবশ্যই হারাম খাবার পরিহার করতে হবে। তেমনি ভাবে আমাদের উপার্জন ও হালাল পথে হতে হবে। উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে তাঁর ইবাদত কবুল হয় না।
ধৈর্য্য ধারণ করা
যদিও আমারা কথায় বলি ধৈর্য্য ফল মিষ্টি হয়। বাস্তব জিবনেও আস্লেই এটা সত্য। মহান আল্লাহ্ নিজে কুরআনে এ নিয়ে বলেছেন। তিনি বলেন , ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুছবিরু ওয়া ছাবিরু ওয়া রাবিতু; ওয়াত্তাকুল্লাহা লাআল্লাহুম তুফলিহুন’
অর্থ: হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ( সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)।
এ হতে আমরা বুজতে পারি যে, ধৈর্য্য অনেক বর গুন। দোয়া কবুলের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করা খুবই জরুরী।
দোয়ার বিনিময়
যদি উপরের শর্তগুলো মেনে দোয়া করা হয় এবং সেটি কবুল হয় তাহলে কি ভাবে এর ফলাফল আমরা পেয়ে থাকি।
১। দোয়া দ্রুত কবুল হয়ে যাবে
২। এই দোয়ার ফল সে আখিরাতে পাবে
৩। সমপরিমান দুঃখকষ্ট অথবা বিপদ থেকে মুক্তি পাবেন
আসুন দোয়া কবুলের আরো কিছু প্রশ্ন-উত্তর জেনে নেইঃ
দোয়া কবুলের সময় কখন কখন?
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে কবুল করা হয়
- আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে
- শুক্রবার জুমার দিনে
- সেজদার মাঝের দোয়া
- ইফতারের সময়ের দোয়া
- কদরের রাতে
- আরাফাতের দিনে
- বৃষ্টির হওয়ার সময়ে
কোনটির কারণে দোয়া কবুল হবে না?
- হারাম খাওয়া
- ফরজ ইবাদত না করা
- আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা:
- দোয়া করার সময় অমনোযোগী থাকা