এই দুনিয়ার চিরন্তন সত্য হল সকল প্রাণীকেই একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শুরু হবে পরকালের অনন্ত জীবন। আর এই পরকালের প্রথম ধাপ হল কবর।ইসলামে মৃত্যুর স্মরণকে আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মৃত্যুচিন্তা মানুষের মনকে গুনাহ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এটি শুধু নেক আমলে উৎসাহ দেয় না, বরং পরকালের ভয়ও জাগ্রত করে, যা ঈমানকে শক্তিশালী করার মূল উপাদান।
কবর আজাব থেকে মুক্তির দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই মাসিহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মরণের বিপদাপদ থেকে।
কবরের আজাব থেকে মুক্তির প্রধান উপায়
কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে কিছু বিশেষ আমল ও ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিয়মিত চর্চা করলে আল্লাহ তাআলার রহমতে কবরের কঠিন পরীক্ষায় শান্তি লাভ করা যায়।
তাওহিদে বিশ্বাস ও তাকওয়া অবলম্বন
আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও তাঁর আদেশ মেনে চলাই সফলতার প্রধান চাবিকাঠি। একজন মুমিন যখন আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং পাপ থেকে দূরে থাকে, তখন তার জন্য কবরের ফেতনা কমে যায়।
সুরা মুলক তেলাওয়াতের ফজিলত
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক তেলাওয়াত করে, তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।” (তিরমিজি: ২৮৯০) এটি আমাদের জন্য একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল।
জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুর বিশেষ মর্যাদা
হাদিসে এসেছে, “যে মুসলমান জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করবে, আল্লাহ তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন।” (তিরমিজি: ১০৯৫) জুমার দিনটি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত পবিত্র, আর এই দিনে মৃত্যু হলে তা আল্লাহর বিশেষ রহমত হিসেবে বিবেচিত হয়।
পেটের রোগে মৃত্যু হলে কবরের আজাব নেই
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যাকে তার পেটের রোগে মৃত্যু দেয়, তাকে কবরের আজাব দেওয়া হবে না।” (তিরমিজি: ১০৬৪) এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে নির্দিষ্ট কষ্টদায়ক মৃত্যুগুলোর জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বিশেষ মাফ রয়েছে।
দান-সদকা ও নিয়মিত তওবা
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকা এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমাদের পাপমুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নিয়মিত এসব আমল কবরের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায়।
নাবালেগ ও মানসিক অসুস্থদের জন্য আজাব নেই
ইসলামী বর্ণনায় এসেছে, নাবালেগ শিশু এবং মানসিকভাবে অসুস্থদের জন্য কোনো কবরের আজাব হবে না। এটি আল্লাহর বিশেষ করুণা এবং ন্যায়বিচারের একটি নিদর্শন।
মৃত্যুর কথা স্মরণ করা
মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ, এবং এর ওপর দৃঢ় থাকে, তাদের জন্য কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” (সুরা আহকাফ: ১৩)
কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে সুরা মূলক
হজরত উসমান (রা.) যখন কোনো কবরের পাশ দিয়ে যেতেন, তখন কান্নায় তার দাড়ি ও বুক ভিজে যেত। একদিন লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি তো জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা শুনেও এত বেশি কাঁদেন না, অথচ কবরের পাশ দিয়ে গেলেই কেন এত কান্না করেন?”
উসমান (রা.) জবাবে বললেন, “আমি রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে শুনেছি, কবর আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে এখানে মুক্তি পাবে, তার জন্য পরবর্তী সব ঘাঁটিই সহজ হয়ে যাবে। আর যে এখানে ব্যর্থ হবে, তার জন্য হাশরের দিন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।”
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন এশার নামাজের পর ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি সুরা তাবারাকাল্লাজি (অর্থাৎ সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে, তার মৃত্যুর পর কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।” (তিরমিজি: ২৮৯০)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কবরের আজাবের ভীতি এমন এক বাস্তবতা, যা মুমিনদের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে। আর নিয়মিত সুরা মুলক পাঠের মাধ্যমে কবরের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
পিতা মাতার কবর জিয়ারতের দোয়া
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত